আল্লাহর আনুগত্যে সুখ – তৃতীয় খন্ড

হযরত আবদুল্লাহ বিন মারযুকে (রহিমাহুল্লাহ) এর ঘটনা

হযরত আবদুল্লাহ বিন মারযুক (রহিমাহুল্লাহ) ছিলেন আল্লাহর একজন ধার্মিক বান্দা এবং মহান মুহাদ্দিস হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনা এবং হযরত ফুযাইল বিন ইয়ায (রহিমাহুমাল্লাহ) এর সমসাময়িক।

প্রথমে তিনি দুনিয়ার বিলাসিতায় আকৃষ্ট ছিলেন এবং দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না। তবে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তওবা করার এবং জীবন সংস্কার করার ঐশ্বরিক তাওফীক দান করেছিলেন। তাঁর তওবার কাহিনী নিম্নরূপ:

একবার, আবদুল্লাহ বিন মারযুক (রহিমাহুল্লাহ) মদ পান এবং সঙ্গীত শোনার মত বৃথা কাজে মগ্ন ছিলেন। এই পাপকর্মে লিপ্ত থাকার সময় তিনি যোহর, আসর এবং মাগরিবের নামাজ কাযা করেছিলেন।

প্রতিবার নামাজের সময় হলে, তাঁর একজন দাসী তার কাছে এসে তাঁকে নামাজ পড়ার কথা মনে করিয়ে দিত। কিন্তু, মদ্যপান ও বিনোদনে মগ্ন থাকার কারণে, সে তার কথার প্রতি কোন মনোযোগ দিত না।

অবশেষে, যখন এশার নামাজের সময়ও শেষ হয়ে গেল এবং রাত শেষ হয়ে গেল, তখন তার দাসী আগুন থেকে একটি জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে তাঁর পায়ে রাখল।

জ্বলন্ত অঙ্গারটি যখন তাঁর পায়ে স্পর্শ করল, তখন সে ব্যথায় চিৎকার করে উঠল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কী করছো!” দাসী উত্তর দিল, “যখন তুমি এই পৃথিবীর আগুনের জ্বলন্ত অঙ্গার সহ্য করতে পারছো না, তখন জাহান্নামের আগুন কিভাবে সহ্য করবে?”

যখন সে তাঁর দাসীর কাছ থেকে এই উপদেশ শুনল, তখন সে তৎক্ষণাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল। এটি ছিল তাঁর জীবনের মোড়।

অতএব তিনি আল্লাহর দিকে ফিরে তাওবা করলেন এবং যে নামাজগুলো তিনি কাযা করেছিলেন সেগুলো আদায় করলেন। এরপর তিনি নিজের জীবনকে সংস্কার করলেন এবং পাপের জীবন ত্যাগ করলেন। তিনি আল্লাহর পথে তাঁর সম্পদ উৎসর্গ করলেন এবং দুনিয়ার সামান্য সম্পদের উপর নির্ভর করে সরল জীবনযাপন শুরু করলেন।

জীবন সংস্কারের পর, একবার হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনা (রহিমাহুল্লাহ) এবং হযরত ফুজাইল বিন ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সাথে দেখা করতে গেলেন। তাঁরা তাঁকে সুন্নত অনুসারে সম্পূর্ণ সরল জীবনযাপন করতে দেখেছিলেন।

হযরত সুফিয়ান (রহিমাহুল্লাহ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হাদীসে উল্লেখ আছে যে, যখন কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু কুরবানী করে, তখন আল্লাহ তাঁকে তার চেয়েও উত্তম কিছু দান করেন। তুমি যা কিছু কুরবানী করেছো তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমাকে কী দিয়েছেন?”

হযরত আবদুল্লাহ বিন মারযুক (রহিমাহুল্লাহ) উত্তর দিলেন, “আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রকৃত সুখ এবং অন্তরের তৃপ্তি দান করেছেন।”[1]


[1] كتاب التوابين لابن قدامة صـ 122

Check Also

ইসলামের সৌন্দর্য – তৃতীয় খন্ড

ইসলামের জীবনরেখা যখন একজন ব্যক্তি ডুবে যাচ্ছে এবং বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, তখন সে …