ইসলামের সৌন্দর্য – চতুর্থ খন্ড

নামাজ -জান্নাতের চাবিকাঠি

ইসলামই একমাত্র পথ যা আল্লাহর ভালোবাসার দিকে নিয়ে যায় এবং জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। ইসলামের উপর অনুশীলনের মাধ্যমে, ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে এবং অনন্ত সফলতা অর্জন করবে।

ইসলামের সকল ফরযের মধ্যে সালাতের ফরযের স্থান সর্বোচ্চ। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেছেন, “নামাজ হল জান্নাতের চাবিকাঠি।”[1]

অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেছেন, “নামাজ হল একটি নূর (ঐশ্বরিক আলো)।”[2] বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই বৈশ্বিক সংকটের মুখে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

কিন্তু, কুরআন মাজিদ ও মুবারক হাদিসে আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিযিক ও জীবিকার নেয়ামতকে নামাজের সাথে যুক্ত করেছেন।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‎

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ

তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দাও এবং (নিজেকে) তার উপর অবিচল থাকতে দাও। আমরা তোমাদের কাছে রিজিক চাই না – আমরা তোমাদেরকে রিজিক দিই। [3]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাদ্বীয়াল্লাহু) বর্ণনা করেন যে, যখনই রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর মুবারক পরিবার আর্থিক সংকটে ভুগত, তখনই রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) তাঁদেরকে নামাজ আদায় করার জন্য তাগিদ দিতেন এবং তাদের সামনে উল্লিখিত আয়াতটিও শোনাতেন।[4]

দ্বীনের কেন্দ্র স্তম্ভ

যখন একজন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে, তখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাকে সর্বপ্রথম যে বিষয়গুলো শিক্ষা দিতেন তার মধ্যে ছিল নামাজ।[5]

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর সমগ্র জীবন উম্মতে নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত ছিল। যখন তিনি কুবা ও মদীনা মুনাওয়ারায় আসেন, তখন তাঁর প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার ছিল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষকে নামাজের জন্য একত্রিত করা।[6]

এ ছাড়া রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম নামাজের জন্য মানুষকে একত্রিত করার জন্য প্রত্যেক এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।[7]

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, নামাজ হল দ্বীনের কেন্দ্রস্তম্ভ। অন্য কথায়, এই কেন্দ্র স্তম্ভকে রক্ষা করার মাধ্যমে একজনের সমগ্র দ্বীন সুরক্ষিত থাকবে এবং এই কেন্দ্র স্তম্ভটিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে দ্বীনের সমগ্র কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে।[8]

হযরত আয়েশা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা) রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর আচার-আচরণ এবং মসজিদে নামাজ আদায়ের প্রতি তিনি যে গুরুত্ব দেখিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, “বাড়ির মধ্যে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) সবসময় বাড়ির কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু আজান শোনার সাথে সাথেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে চলে যেতেন।”[9]

একবার সাকীফের প্রতিনিধি দল ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর কাছে আসে। কিন্তু, তারা জিহাদে বের হওয়া, যাকাত আদায়কারীকে উশর (ফসলের দশ শতাংশ দেওয়া) প্রদান এবং নামাজ আদায় করা থেকে মাফ করার জন্য অনুরোধ করেছিল।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) তাদের প্রথম দুটি অনুরোধে সম্মত হন, কিন্তু তাদের নামাজ ত্যাগ করার উপর ছাড় দিতে অস্বীকার করেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেছেন, “যে ধর্মে নামাজ নেই সেখানে কোন কল্যাণ নেই।”‎[10]

হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) এর জীবনে নামাজের গুরুত্ব

সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এতটাই গভীরভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীনও তারা নামাজের স্তম্ভকে সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।

যে সকালে হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেদিন হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) তাঁর নিকট প্রবেশ করেন। প্রবেশ করে তিনি হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-কে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান।

হযরত মিসওয়ার (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) উপস্থিতদের জিজ্ঞেস করলেন, হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) তাঁর নামাজ আদায় করেছেন কি না। তাঁরা উত্তর দিল যে তিনি এখনও জ্ঞান ফিরে পাননি, তাই তিনি নামাজ আদায় করেননি।

হযরত মিসওয়ার (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) সারাজীবন হযরত উমরের নামাজের প্রতি ভক্তি জানতেন। তাই, হযরত মিসওয়ার (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) তাঁদেরকে নামাজের সময় উল্লেখ করে তাঁকে জাগানোর পরামর্শ দিলেন। তদনুসারে তাঁরা ডেকে বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনার নামাজ!

হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) ‘নামাজ’ শব্দটি শোনা মাত্রই জেগে উঠলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “হ্যাঁ! আল্লাহর কসম! যে তার নামাজে অবহেলা করে তার জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই!” হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এরপর তার নামাজ আদায় করেন।[11]

হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) আরও জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কি ফজরের নামাজ আদায় করেছিল? তাঁকে বলা হল যে, লোকেরা তাদের নামাজ আদায় করেছে। তখনই হযরত উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) সন্তুষ্ট বোধ করলেন।[12]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নামাজে অবিচল রাখুন এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর প্রতিটি সুন্নত অনুকরণ করার ক্ষমতা দান করুন।


[1] سنن الترمذي، الرقم: 4، وإسناده حسن كما في التيسيير للعلامة المناوي رحمه الله 2/377

[2] صحيح مسلم، الرقم: 223

[3] سورة طه: 132

[4] المعجم الأوسط، الرقم: 886 و رجاله ثقات كما في مجمع الزوائد، الرقم: 11173

[5] مسند البزار، الرقم: 2765، ورجاله رجال الصحيح كما في مجمع الزوائد، الرقم: 1618

[6] صحيح البخاري، الرقم: 3906

[7] مسند أحمد، الرقم: 23146، وإسناده صحيح كما في مجمع الزوائد، الرقم: 1936، وقال الترمذي: قال سفيان: قوله: ببناء المساجد في الدور يعني القبائل

[8] سنن الترمذي، الرقم: ٢٦١٦، وقال: هذا حديث حسن صحيح

[9] صحيح البخاري، الرقم: 5363

[10] سنن أبي داود، الرقم: 3026، وقال المنذري رحمه الله في مختصره، الرقم: 3025: قد قيل: إن الحسن البصري لم يسمع من عثمان بن أبي العاص

[11] المعجم الأوسط للطبراني، الرقم: 8181، ورجاله رجال الصحيح كما في مجمع الزوائد، الرقم: 1636

[12] مصنف عبد الرزاق، الرقم: 581

Check Also

ইসলামের সৌন্দর্য – ‎দ্বিতীয় খন্ড

ইসলাম কিসের দিকে ‎আমন্ত্রণ জানায়? ‎ নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর বরকতময় যুগে বিভিন্ন …