ইসলামের সৌন্দর্য – তৃতীয় খন্ড

ইসলামের জীবনরেখা

যখন একজন ব্যক্তি ডুবে যাচ্ছে এবং বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, তখন সে তার জীবন বাঁচানোর জন্য যেকোন কিছু করবে। যদি সে কাছাকাছি একটি দড়ি ধরতে সক্ষম হয় যার মাধ্যমে সে নিজেকে পানি থেকে টেনে আনতে পারবে, তবে সে জান প্রাণ দিয়ে তা আঁকড়ে ধরবে এবং এটিকে তার জীবনরেখা হিসাবে দেখবে।

এই পৃথিবীতে, যখন একজন মুমিন ফিতনার উত্তাল জোয়ারের সম্মুখীন হয় যা তাকে পাপের মধ্যে নিমজ্জিত করে এবং তার দ্বীনকে ধ্বংস করার হুমকি দেয়, তখন তার নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, “ইসলামের জীবনরেখা কী যার সাথে আমাকে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকা উচিত? ”

ইসলামের জীবনরেখা হল আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করা। এটিই সকল সমস্যার সমাধান, হোক তা নিজের দ্বীন বা দুনিয়া সম্পর্কিত।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) যখন মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন, তখন তিনি যে প্রথম জুমার খুতবা প্রদান করেন, তখন তিনি লোকদের উদ্দেশে বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক উন্নত করবে, আল্লাহ তা‘আলা লোকদের থেকে তার জন্য যথেষ্ট হবেন। (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সাথে তার বিষয়াদি দেখভাল করবেন এবং তাদের সাথে তার সম্পর্ক উন্নত করবেন)।”[1]

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করাই হল দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনের চাবিকাঠি। এটিকে সূর্যের সাথে তুলনা করা যেতে পারে যা পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে আলোকিত করে।

যখন কেউ তার জীবনকে আল্লাহর ভালবাসায় আলোকিত করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার সাথে তার সম্পর্ক উন্নত করে, তখন আল্লাহ তাকে তার ঐশ্বরিক সমর্থন দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং তাকে সবকিছুতে সফলতা দান করেন। এমনকি মানুষের সাথে তার সম্পর্ক উন্নত হয় এবং লোকেরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে

কিন্তু, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য, একজনের জন্য তার জীবনে তিনটি দিক বজায় রাখা অপরিহার্য।

প্রথমটি হলো নামাজে সময়ানুবর্তী হওয়া, দ্বিতীয়টি হলো গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং তৃতীয়টি হলো সৃষ্টির প্রতি, বিশেষ করে নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।

নামাজে সময়ানুবর্তিতা

হাদিসে নামাজকে দ্বীনের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[2] নামাজে সময়ানুবর্তিতা না করে কেউ কখনোই আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে এবং তাঁর খোদায়ী ভালোবাসা ও করুণা লাভ করতে সক্ষম হবে না।

নিজের উম্মতের পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাআতের সাথে ফরজ সালাত আদায় করা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর জ্বলন্ত ইচ্ছা ছিল।

মসজিদে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এতটাই অনুরাগী ছিলেন যে, ইন্তেকালের পূর্বে তার চরম অসুস্থতায়ও যখন তিনি অসহায়ভাবে চলতে পারতেন না, তখন তিনি দুই জনের কাঁধে ভর করে মসজিদে গিয়েছিলেন নামাজের জন্য।[3]

গৃহে নামায আদায়কারী পুরুষদের সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “যদি গৃহে নারী ও শিশু না থাকত, তাহলে আমি এশার সালাত আদায় করতাম এবং তারপর একদল যুবককে, কোন বৈধ অজুহাত ছাড়াই যারা তাদের ঘরে ফরজ নামাজ আদায় করে তাদের বাড়িতে আগুন দিতে নির্দেশ দিতাম।”[4]

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চায়, তাকে তার দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করার মাধ্যমে হেফাজত করতে হবে।[5]


[1] البداية والنهاية: 4/528، تاريخ الطبري 2/395

[2] سنن الترمذي، الرقم: ٢٦١٦، وقال: هذا حديث حسن صحيح

[3] صحيح البخاري، الرقم: ٧١٢

[4] مسند أحمد، الرقم: 8796، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد، الرقم: 2162: رواه أحمد وأبو معشر ضعيف، وقال في غاية المقصد، الرقم: 644: هو فى الصحيح خلا ذكر الذرية والنساء، صحيح مسلم، الرقم: 651، صحيح مسلم، الرقم: 651

[5] صحيح مسلم، الرقم: 654، سنن النسائي، الرقم: 849

Check Also

আমাদের প্রিয় সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহ – তৃতীয় খন্ড ‎

হযরত ইব্রাহিম ও নমরূদের মধ্যে বিতর্ক নমরূদ ছিলেন একজন অত্যাচারী, শোষণকারী রাজা যে দাবি করেছিল …