মহররম মাসের সুন্নত এবং আদব – ‎ তৃতীয় খন্ড

(১) মহররমের ১০ তারিখ আশুরার দিন। এই দিনে রোজা রাখা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। এই দিনে রোজা রাখার সওয়াব হলো, বিগত বছরের সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

রত আবু কাতাদাহ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-কে আশুরার দিন (মহররমের ১০ তারিখ) রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) উত্তরে বললেন, তা (আশুরার দিনের রোজা) বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (সহীহ মুসলিম #১১৬২)

 (২) ১০ই মহররমের (আশুরার দিন) রোজা রাখার সাথে সাথে ব্যক্তি যেন একদিন আগে বা একদিন পর রোজা রাখে (অর্থাৎ, সে যেন মহরমের ৯ এবং ১০ অথবা ১০ এবং ১১ তারিখ রোজা রাখে) । এটা ইহুদীদের বিরোধিতা করার জন্য যারা শুধুমাত্র আশুরার দিনে রোজা রাখে।

রত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “আশুরার রোজা পালন কর এবং একদিন আগে অথবা একদিন পরে অর্থাৎ মহরমের ৯ এবং ১০ অথবা ১০ এবং ১১ তারিখ রোজা রাখার মাধ্যমে ইহুদিদের বিরোধিতা কর।” (আস-সুনানুল কুবরা #৮৪০৬)

 (৩) আশুরার রোজা যেমন প্রচুর পুণ্য অর্জনের মাধ্যম, তেমনি আশুরার উপলক্ষও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। তা হচ্চে সর্বাবস্থায় নিজের ইসলামী পরিচয় দৃঢ়ভাবে বজায় রাখার এবং কাফেরদের (কাফের, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) তাদের সংস্কৃতিতে অনুকরণ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার শিক্ষা। তাই, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ইহুদীদের বিরোধিতা করার জন্য উম্মতকে দুই দিন (অর্থাৎ নবম ও দশম বা দশম ও একাদশ দিবস) রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

যখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তার উম্মতের জন্য রোযার দিক থেকে ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্যতা অপছন্দ করেছেন (যা একটি ইবাদাত), তখন আপনি ভালভাবে ধারণা করতে পারেন যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) তার উম্মতকে কাফেরদের তাদের সংস্কৃতি, পোশাক এবং তাদের জীবনের অন্যান্য দিক দিয়ে অনুকরণ করা কতটা অপছন্দ করবেন।

(৪) আশুরার দিনে ব্যক্তি যেন তার পরিবারকে খাওয়ানো এবং তাদের জন্য ব্যয় করার ক্ষেত্রে আরো উদার হয়। এই দিনে পরিবারের প্রতি উদার হওয়ার ফজিলত হল আল্লাহ তাআ’লা তাকে পুরো এক বছরের জন্য প্রচুর রিযিক দান করবেন।

রত আবু হুরায়রা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য অবাধে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে সারা বছর জন্য প্রচুর রিযিক দান করবেন। (শুয়াবুল ঈমান #৩৫১৫)

 (৫) ব্যক্তি যেন সেসব ভিত্তিহীন আমল এবং প্রথায় লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে যাতে লোকেরা ১০ই মহররমে নিয়োজিত হয় যেমন হযরত হুসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের শোক পালন করা যা শিয়া দের দ্বারা চর্চা করা হয়।

এটি মনে রাখা উচিত যে হযরত হুসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর লোমহর্ষক শাহাদাত নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি ছিল। যাইহোক, তবুও এটি বোঝা উচিত যে আশুরার উপলক্ষ এবং এর ফজিলত হযরত হুসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের সাথে জড়িত নয়। বরং হযরত হুসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্মের আগেই আশুরা তার ফজিলত ও পূণ্য লাভ করেছিল। তাই হযরত হুসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের শোক পালনের প্রথা,  যেমনটি শিয়াদের দ্বারা প্রচলিত, ইসলামে তার কোনো ভিত্তি নেই।

Check Also

পুরুষের নামাজ – সপ্তম খন্ড

রুকু এবং কওমা (১) সূরা ফাতিহা এবং কিরাত পড়া শেষ হলে পুনরায় তাকবীর পড়া এবং …