ইদের সুন্নত এবং আদব

ঈদ

ঈদ-উল-আযহা এবং ঈদ-উল-ফিতরের উপলক্ষ্য মুসলমানদের জন্য উৎসবের দিন। ঈদ-উল-ফিতরের উপলক্ষ্যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান, অবশ্যই সকল ধর্মের (অর্থাৎ, ইহুদি, খ্রিস্টান ইত্যাদি) মানুষের জন্য ঈদ রয়েছে (অর্থাৎ, খাস উৎসবের দিন), এবং এই দিন (অর্থাৎ, ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা) আমাদের ঈদ।

ইদের সুন্নত এবং আদব

(১) মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা।

(২) গোসল করা।

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদ-উল-ফিতরের এবং ঈদ-উল-আযহার দিন গোসল করতেন

(৩) উত্তম কাপড় পরিধান করা (অর্থাৎ, ব্যক্তির নিকট থাকা উত্তম কাপড়, নতুন কাপড় হতে হবে এমন কোন কথা নেই)।

হযরত জাবির (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে একটি জুব্বা (গাউন বা লম্বা পোশাক) ছিলো, যা তিনি খাচ করে ঈদের দিন এবং জুমআ’র দিন পরিধান করতেন

(৪) আতর লাগানো।

(৫) ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়া (অর্থাৎ, শহরের বাহিরে খোলা ময়দান)।

হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহার দিন, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঈদগাহে (অর্থাৎ, মদিনা তয়্যিবার বাহিরে একটি খোলা ময়দানে) যেতেন প্রথম যে কাজটি তিনি করতেন তা হচ্ছে নামাজ পড়ানো (অর্থাৎ, তিনি খুতবার পূর্বে নামাজ পড়ান)

(৬) ঈদ-উল-আযহার দিন ঈদের নামাজের পূর্বে কোনকিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা (অর্থাৎ, প্রথম যে বস্তুটি খাবে তা যেন কুরবানি পশুর মাংশ হয়)। কিন্তু ঈদ-উল-ফিতরের দিন, ব্যক্তি যেন ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় পরিমান খাজুর বা অন্যকোন মিষ্টান্য খায়।

হযরত আনাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বৰ্ণণা করেন যে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ঈদ-উল-ফিতরের দিন সবসময় ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে কিছু খাজুর খেতেন

হযরত বুরাইদাহ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বৰ্ণণা করেন যে, ঈদ-উল-ফিতরের সময় রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) কিছু না খাওয়া পর্যন্ত (ঈদের নামাজের জন্য) বের হতেন না। কিন্তু, ঈদ-উল-আযহার সময় (ঈদের নামাজ থেকে) ফেরার আগ পর্যন্ত কোনকিছু খেতেন না। তারপর, (প্রথম) বস্তু যা তিনি খেতেন তা হচ্ছে কুরবানিকৃত পশুর মাংস।

ইমাম বায়হাকির রিওআয়াতে বর্ণিত আছে যে, প্রথম বস্তু যা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) খেতেন তা হচ্ছে কুরবানিকৃত পশুর কলিজা।

(৭) সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া।

(৮) পায়ে হেঁটে ঈদের নামাজের যায়গায় যাওয়া।

হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বৰ্ণণা করেন যে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ঈদের নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফেরত আসতেন

(৯) ঈদ-উল-আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে তাকবির পড়া, এবং ঈদ-উল-ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিরবে তাকবির পড়া। ঈদগাহে পৌঁছানোর পর ইমাম ঈদ নামাজ পড়ানোর জন্য বের হওয়া পর্যন্ত তাকবির পড়া চালিয়ে যাওয়া।

(১০) ঈদগাহে যাওয়ার জন্য এবং ঈদগাহ থেকে ফেরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করা।

হযরত জাবির (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের দিন ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন (অর্থাৎ, যাওয়ার সময় এবং ঈদের নামাজ থেকে ফেরার সময়)

(১১) কোন আযান অথবা ইকামত ছাড়া ছয় অতিরিক্ত তাকবিরের সহিত দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায় করা।

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের দিন কোন আযান অথবা ইকামত ছাড়া (ঈদের) নামাজ আদায় করতেন

(১২) ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ পড়া সুন্নত।

হযরত নো’মান বিন বাশির (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উভয় ঈদের নামাজে এবংকি জুমআ’র নামাজে সূরা আলা এবং সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন

(১৩) ঈদের নামাজের পর বসে থাকা এবং খুতবা শোনা। নামাজের পর বসে থাকা এবং খুতবা শোনা এমন একটি সুন্নত যার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

(১৪) খুতবার সময়, চুপ থাকা এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব।

(১৫) ঈদের নামাজের পূর্বে এবং পরে উভয় সময়ে, ঈদগাহে কোনপ্রকার নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদগাহে আসতেন এবং ঈদের নামাজ পড়তেন না-তো তিনি ঈদের নামাজের পূর্বে কোনপ্রকার নফল নামাজ পড়তেন না ঈদের নামাজের পর (অর্থাৎ, ঈদগাহে)

(১৬) ঈদের রাতে জাগ্রত থাকা এবং ইবাদতে মাশগুল থাকার মাধ্যমে, বান্দাকে এইভাবে পুরস্কৃত করা হবে যে যখন সকল অন্তর মরে যাবে তখন তার অন্তর জীবিত থাকবে।

হযরত আবু উমামাহ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান, “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ তাআ’লা  থেকে পুরস্কার লাভের আশায় নামাজে দাঁড়ায়, যেদিন সকল সকল অন্তর মরে যাবে সেদিন তার অন্তর জীবিত থাকবে। (“যেদিন অন্তর মরে যাবে” ফিতনা-ফাসাদের সময়কে ইঙ্গিত করে যখন মানুষের অন্তর আল্লাহ তাআ’লার ব্যাপারে গাফিল হবে এমন সময়ে আল্লাহ তাআ’লা তার অন্তরকে তাঁর যিকরের মাধ্যমে জীবিত রাখবে)”

Check Also

পুরুষের নামাজ – সপ্তম খন্ড

রুকু এবং কওমা (১) সূরা ফাতিহা এবং কিরাত পড়া শেষ হলে পুনরায় তাকবীর পড়া এবং …