অযূর ফজিলত

(১) অযূ হচ্ছে সগিরা গুনাহ থেকি শুদ্ধি।

عن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من توضأ فأحسن الوضوء خرجت خطاياه من جسده حتى تخرج من تحت أظفاره (صحيح مسلم، الرقم: 245)

হযরত উসমান (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযূ করে, এবং তা নিখুঁত ভাবে করে, তার (সগিরা) গুনাহ তার শরীর থেকে এমনকি ভাবে অপসারিত হয় (এবং ধুয়ে যায়) যে তা তার নখের নিচ থেকেও ঝরে যায়।”

(২) অযূ কিয়ামতের দিন অযূর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকে একটি বিশেষ (খাস) নুরে আলোকিত করবে।

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أتى المقبرة فقال: السلام عليكم دار قوم مؤمنين وإنا إن شاء الله بكم لاحقون وددت أنا قد رأينا إخواننا قالوا: أولسنا إخوانك يا رسول الله قال: أنتم أصحابي وإخواننا الذين لم يأتوا بعد قالوا: كيف تعرف من لم يأت بعد من أمتك يا رسول الله قال: أرأيت لو أن رجلا له خيل غر محجلة بين ظهري خيل دهم بهم ألا يعرف خيله قالوا: بلى يا رسول الله قال: فإنهم يأتون غرا محجلين من الوضوء وأنا فرطهم على الحوض (صحيح مسلم، الرقم: 249)

হযরত আবু হুরায়রা  (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন কবরস্থানে প্রবেশ করেন এবং নিচের দোয়াটি পাঠ করেন,

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ

হে মুমিনদের বিশ্রামের ঘর, তোমার উপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক, ইনশাআল্লাহ্ শিগ্রই আমরা তোমাদের সাথে যোগ দেবো।

তারপর হযরত নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান , “আমার ইচ্ছা আমরা যদি আমাদের ভাইদের সাথে দেখা করতে পারতাম সাহাবা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম) জিজ্ঞেস করলেন, হে রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমরা কি আপনার ভাই নয়? হযরত নবী  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন, “তোমরা আমার সাহাবী (সাথী) (অর্থাৎ তোমাদের স্থান বাকি উম্মত থেকে উচ্চতর। তোমরা আমার ভাই  এবং তোমাদেরকে আমার সতীর্থও দান করা হয়েছে)। আমার ভাই হচ্ছে তারা যারা এখনো দুনিয়াতে আসে নাই (অর্থাৎ তারা আমার মৃত্যুর পর জন্ম নিবে এবং দুনিয়াতে আসবে)। সাহাবা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম) আরো জিজ্ঞাসা করলেন, “হে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আপনার ঐসব  অনুসারীদের কিভাবে চিনবেন যারা আপনার পরে আসবে?” হযরত নবী  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন, “যদি কোন ব্যক্তি সাদা কপাল এবং পা ওয়ালা কালো ঘোড়ার মালিক হয় এবং সেগুলো পুরোপুরি কালো রঙের ঘোড়াদের সাথে মিশে যায়, তবে কি সে ঐসব ঘোড়াদের থেকে নিজের গোড়াগুলি চিনবে না?” সাহাবা  (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম) উত্তর দিলেন, “সে অবশ্যই তাদের চিনবে হে রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।” হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন, “তারা (আমার অনুসারিরা) কিয়ামতের দিন নামাজের জন্য অযূ করার কারণে বিশেষ নূর দ্বারা আলোকিত কপাল এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাথে আসবে (এই চিহ্ন দ্বারা আমি বাকিদের থেকে তাদেরকে চিনবো) এবং আমি তাদেরকে আগ বাড়িয়ে দেবো (আখিরাতে পৌঁছাতে) এবং আমি তাদেরকে হাউজে কাউসারে পানি পান করতে দিবো (যখন তারা কিয়ামতের দিন আমার সাথে মিলিত হবে)।

(৩) অযূর সহিত থাকা সত্যিকার ইমানদারের চিহ্ন।

عن ثوبان رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: استقيموا ولن تحصوا واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة ولا يحافظ على الوضوء إلا مؤمن (سنن ابن ماجة، الرقم: 277)[1]

হযরত সাওবান (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সবকিছুতে ইস্তিকামাত (দৃঢ়তা) অবলম্বন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করো, যদিও তুমি কখনোই তা পুরোপুরি ভাবে করতে সক্ষম হবে না,  এবং মনেরেখো সবথেকে পুণ্যেবান কাজ হচ্ছে নামাজ, অযূর হেফাজত করা হচ্ছে সত্যিকার ইমানদারের চিহ্ন (অর্থাৎ, পরিপূর্ণ এবং নিখুঁত অযূ করা এবং সবসময় অযূর সহিত থাকা সত্যিকার ইমানদারের চিহ্ন)

(৪) যে ব্যক্তি অযূর সহিত মৃত্যুবরণ করেন, তাকে শহীদের মর্যাদা দান করা হয়।

عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا بني إن استطعت أن لا تزال على وضوء فإنه من يأتيه الموت وهو على وضوء يعطى الشهادة (مجمع الزوائد، الرقم: 1470)[2]

হযরত আনাস বিন মালিক  (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “হে আমার প্রিয় বালক! যদি তুমি অযূর সহিত থাকতে পারো (তাহলে তা কর), যেহেতু যে ব্যক্তি অযূর সহিত মৃত্যুবরণ করেন, তাকে শহীদের মর্যাদা দান করা হয়।”

(৫) যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ অযূ করে, সে নিজেকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করে, যেভাবে ইসলামের সীমান্ত রক্ষীরা মুসলমানদেরকে ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে।

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ألا أدلكم على ما يمحو الله به الخطايا ويرفع به الدرجات قالوا: بلى يا رسول الله قال: إسباغ الوضوء على المكاره وكثرة الخطا إلى المساجد وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط (صحيح مسلم، الرقم: 251)

হযরত আবু হুরায়রা  (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন সহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার কি তোমাদেরকে এমন কাজের ব্যাপারে খবর দেওয়া উচিত নয়, যার দ্বারা আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাদের গুনাহ গুলোকে মুছে দিবেন এবং তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?” সাহাবীরা উত্তর দিলেন, “অবশ্যই আমাদের বলুন, হে রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!” হযরত রসুলুল্লাহ  (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পরিপূর্ণ অযূ করা, অনেক কদমে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজ শেষে পরবর্তী নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। এই কাজগুলো যারা ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে ইসলামের সীমান্ত রক্ষা করে তাদের কাজকে অনুকরণ করে  (এই কাজগুলোর মাধ্যমে, ঐ ব্যক্তি নিজেকে নফস এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে, যেভাবে ইসলামের সীমান্ত রক্ষীরা মুসলমানদেরকে ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে)


[1] قال البوصيري في الزوائد (1/102): رجال إسناده ثقات أثبات إلا أن فيه انقطاعا بين سالم وثوبان ولكن أخرجه الدارمي وابن حبان في صحيحه من طريق ثوبان متصلا

[2] قال الهيثمي: رواه أبو يعلى والطبراني في الصغير وزاد: يا بني إذا خرجت من بيتك فلا يقعن بصرك على أحد من أهل القبلة إلا ظننت أنه له الفضل عليك يا بني إن ذلك من سنتي ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة وفيه محمد بن الحسن بن أبي يزيد وهو ضعيف

قال البوصيري في الإتحاف (الرقم: 540): علي بن زيد بن جدعان ضعيف لكن لم ينفرد به علي بن زيد فقد رواه أحمد بن منيع ثنا يؤيد أبنا العلاء أبو محمد الثقفي سمعت أنس بن مالك … فذكره وسيأتي لفظه في آخر كتاب المواعظ إن شاء الله روى الترمذي قطعة منه في الصلاة وأخرى في العلم من طريق علي بن يزيد

Check Also

পুরুষের নামাজ – সপ্তম খন্ড

রুকু এবং কওমা (১) সূরা ফাতিহা এবং কিরাত পড়া শেষ হলে পুনরায় তাকবীর পড়া এবং …