(১) আল্লাহ তাআ’লা কিছু আম্বিয়াকে অন্যদের তুলনায় উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। পৃথিবীতে যত রসুল এবং আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) এসেছেন তাদের মধ্যে হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ছিলেন মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) কে আল্লাহ তাআ’লা সকল রাসুল ও আম্বিয়াদের নেতা হওয়ার মর্যাদা দান করেছিলেন।[1]
(২) আল্লাহ তাআ’লা হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-কে অনেক বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন যা অন্য আম্বিয়া ও রসুলদের দেওয়া হয়নি। হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেনঃ
“আমাকে ছয়টি আশীর্বাদ দান করা হয়েছে যা অন্য আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)-কে দেওয়া হয়নি ; আমাকে জাওয়ামিউল কালিম দান করা হয়েছিলো (বিস্তৃত বক্তৃতা অর্থাৎ কুরআন মাজিদ এবং মুবারক আহাদিস যার মাধ্যমে কয়েকটি শব্দে বৃহৎ অর্থ রয়েছে), আমি আমার জন্য কাফেরদের হৃদয়ে অস্বাভাবিক ভয় প্রবেশ করার সাথে ঐশ্বরিকভাবে সাহায্য পেয়েছি, যদিও আমি এক মাসের সফরের দূরত্বে, যুদ্ধের গনীমত আমার জন্য জায়েজ করা হয়েছে, সমগ্র পৃথিবীকে আমার জন্য সালাত আদায়ের স্থান এবং সমগ্র পৃথিবীকে আমার জন্য পবিত্র করার মাধ্যম করা হয়েছে (অর্থাৎ পানির অভাবে তায়াম্মুম), আমাকে সমগ্র সৃষ্টির (মানুষ ও জ্বীন) জন্য রসুল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে এবং আমাকে সকল নবীর মোহর করা হয়েছে।”[2]
(৩) হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় যে নেয়ামতটি লাভ করেছেন তা হচ্ছে মি’রাজের বরকত। মি’রাজ বলতে সেই অলৌকিক যাত্রাকে বোঝায় যেখানে হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-কে মক্কা মুকাররামা থেকে বায়তুল মাকদিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-কে স্ব-শরিরে জাগ্রত অবস্থায় এই সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বায়তুল মাকদিসে পৌঁছানোর পর, হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) কে সমস্ত আম্বিয়া ও রসুল (আলাইহিস্ সালাম)-দের নামাজে ইমামতি করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল যা নির্দেশ করে যে তিনি আল্লাহর সমস্ত নবীদের নেতা ছিলেন। সেখান থেকে হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-কে সাত আসমান ও তার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, যতক্ষণ না তিনি জান্নাত ও জাহান্নুমের দর্শন লাভ করেন এবং আল্লাহকে দেখার ও তাঁর সাথে কথা বলার সম্মান পান। এই সফরেই হযরত রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পুরষ্কার লাভ করেন।[3]
[1] تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ (سورة البفرة: 253)
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: فضلت على الأنبياء بست أعطيت جوامع الكلم ونصرت بالرعب وأحلت لي الغنائم وجعلت لي الأرض طهورا ومسجدا وأرسلت إلى الخلق كافة وختم بي النبيون (صحيح مسلم، الرقم: 523)
آمنا بذلك كله وأيقنا أن كلا من عنده وأن محمدا عبده المصطفى ونبيه المجتبى ورسوله المرتضى خاتم الأنبياء وإمام الأتقياء وسيد المرسلين وحبيب رب العالمين (العقيدة الطحاوية صـ 26)
[2] سنن الترمذي، الرقم: 1553، صحيح البخاري، الرقم: 335
[3] سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ (سورة بني إسرائيل: 1)
فالإسراء وهو من المسجد الحرام إلى بيت المقدس قطعي ثبت بالكتاب والمعراج من الأرض إلى السماء مشهور ومن السماء إلى الجنة أو على العرش أو غير ذلك آحاد (شرح العقائد النسفية صـ 170)
والمعراج حق وقد أسري بالنبي صلى الله عليه وسلم وعرج بشخصه في اليقظة إلى السماء ثم إلى حيث شاء الله من العلى وأكرمه الله بما شاء وأوحى إلى عبده ما أوحى (العقيدة الطحاوية صـ 28)
والمعراج لرسول الله عليه السلام فى اليقظة بشخصه إلى السماء ثم إلى ما شاء الله تعالى من العلى حق (العقائد النسفية صـ 169)
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: فرضت على النبي صلى الله عليه وسلم ليلة أسري به الصلوات خمسين ثم نقصت حتى جعلت خمسا ثم نودي يا محمد إنه لا يبدل القول لدي وإن لك بهذه الخمس خمسين (سنن الترمذي، الرقم: 213، وقال: حديث أنس حديث حسن صحيح غريب)
(فصليت فيه ركعتين) أي تحية المسجد والظاهر أن هذه هي الصلاة التي اقتدى به الأنبياء وصار فيها إمام الأصفياء (مرقاة المفاتيح 9/3765)