আল্লাহ তাআ’লা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর বিশিষ্ট সাহাবাদের জন্য তাঁর সন্তুষ্টি ঘোষণা করছেন।

আল্লাহ তাআ’লা  কুরআনে কারীমে সাহাবা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম)-এর জন্য জান্নাত ঘোষনা করেনঃ

وَالسّٰبِقُونَ الْاَوَّلُونَ مِنَ الْمُهٰجِرِينَ وَالْاَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ لا رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِينَ فِيهَا اَبَدًا ط ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ[1]

এবং মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) প্রথম অগ্রগামী এবং যারা সৎকাজে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন বাগান, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরতরে বসবাস করবে। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। 

সাহাবায়ে কিরাম (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম) রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর প্রতি যে অগাধ ভালোবাসা ও অসামান্য ভক্তি দেখিয়েছিন তা সেই সময়ের কাফেরদের পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষ্য থেকে সহজেই অনুমেয়।

যখন হুদাইবিয়ার সন্ধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন কুরাইশদের একজন বার্তাবাহক হযরত উরওয়াহ বিন মাসউদ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) (যিনি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন) সাহাবায়ে কিরাম (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম)-এর রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর সাথে ব্যবহার এবং আচার-আচরণ মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করার সুযোগ পান।

যখন তিনি তাঁর লোকেদের কাছে ফিরে যান, তখন তিনি তাদের বলেন,

“হে কুরাইশ! আমি অনেক বড় বড় রাজার দূত হয়েছি। আমি সিজার,  খোসরু এবং নাজাসিদের আদালত দেখেছি। আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর সঙ্গী-সাথীদের যেমন দেখেছি, তেমন কোনো রাজা বা শাসকের আশেপাশের লোকজনকে এতটা শ্রদ্ধা করতে দেখিনি।

“যখন মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) থুথু ফেলেন, তখন তারা থুথু মাটিতে স্পর্শ করার আগেই তাদের হাতে নিতে তাড়াহুড়ো করে এবং তা তাদের মুখমণ্ডল ও শরীরে মাখে। তিনি যখন কোন নির্দেশ জারি করেন, তারা সবাই তা পালন করতে ছুটে যান।

“যখন তিনি অযূ করেন, তাঁরা মাটিতে পড়ার আগে ব্যবহৃত পানির একটি ফোঁটা সংগ্রহ করার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। যদি কেউ সেই পানি পেতে ব্যর্থ হয় তখন সে, যে ব্যক্তি কিছু পানি পেতে সক্ষম হয়েছিল তাঁর ভেজা হাত স্পর্শ করে এবং তারপর তাঁর মুখে হাত ঘষে।

“যখন তাঁরা তাঁর উপস্থিতিতে কথা বলেন, তখন তাঁরা নিচু স্বরে কথা বলে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে তাঁর মুখের দিকে তাকানোর জন্য কখনই তাদের দৃষ্টি তুলে না। তাঁর মাথা বা দাঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়া চুল তা থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা হয় এবং তারপর তাঁরা এটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখান।

“সংক্ষেপে, আমি কোন গোষ্ঠীর লোককে তাদের সর্দারকে এতটা ভালবাসতে এবং তাঁর প্রতি এত ভক্তি দেখাতে দেখিনি যতটা আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবীরা তাঁকে ভালোবাসতে এবং তাঁর প্রতি ভক্তি দেখাতে দেখেছি।”[2]

আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম)-দের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা দান করুন এবং আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে মুবারক সুন্নত অনুকরণ করার তাওফীক দান করুন।


[1] سورة التوبة: ١٠٠

[2] صحیح البخاری، الرقم: 2731، فضائل اعمال صـ 166

Check Also

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) হযরত সা’দ (রাদ্বীয়াল্লাহু ‎আনহু)-এর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া

حدّد سيدنا عمر رضي الله عنه قبل موته ستة من الصحابة الكرام رضي الله عنهم …