কিয়ামতের আলামতসমূহ – পঞ্চদশ পর্ব

হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন পরবর্তী জীবন এবং তাঁর যুগের অপার বরকত ও নিরাপত্তা

যখন হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীতে আগমন করবেন, তখন মাহদি (রাদ্বীয়াল্লাহু ‘আনহু) মুসলমানদের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মাহদি (রাদ্বীয়াল্লাহু ‘আনহু) হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে বলবেন, “আপনি মুসলমানদের নেতৃত্ব দিন, কারণ আপনি আল্লাহ তা‘আলার নবী।” (ইবনু হিব্বান #৬৮১২, ফিতান লি-নু‘আইম #১০২৮)

এরপর মুসলমানদের বাহিনী হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর নেতৃত্বে দাজ্জাল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং মুসলমানরা বিজয়ী হবে।

এর কিছুদিন পর মাহদি (রাদ্বীয়াল্লাহু ‘আনহু) ইন্তেকাল করবেন এবং হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর জানাযার নামাজ পড়াবেন। নবি ঈসা (আলাইহিস সালাম) উম্মতের মাঝে বেঁচে থাকবেন, ইসলাম পালন করবেন এবং মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবেন। তিনি বিবাহ করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে।

কিছু সময় পর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াজুজ-মাজুজকে পৃথিবীতে ছেড়ে দেবেন। তারা পৃথিবীতে ব্যাপক ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর এক মহাবিপদ পাঠাবেন, যার ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইয়াজুজ-মাজুজ ধ্বংস হওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ফলে শস্য-ফসল প্রচুর উৎপন্ন হবে এবং পশুপাখি ভালোভাবে বেঁচে থাকবে। সেই সময় পৃথিবীতে অপার বরকত থাকবে। ফলমূল ও ফসলের আকারও অনেক বড় হবে। বন্য ও বিষাক্ত প্রাণীর ভয় থাকবে না। মানুষের অন্তর থেকে শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন:

হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) আমার উম্মতের মাঝে ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অবস্থান করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিজিয়া (অমুসলিমদের ওপর ধার্যকৃত কর) বাতিল করবেন, কারণ সবাই ইসলাম গ্রহণ করবে। যাকাত নেওয়া হবে না, কারণ সবাই ধনী হবে। কেউ যাকাত সংগ্রহ করতে যাবে না। পৃথিবী থেকে বিদ্বেষ ও শত্রুতা দূর হয়ে যাবে। বিষাক্ত প্রাণীর বিষ দূর হয়ে যাবে, এমনকি একটি শিশু সাপের মুখে হাত রাখলেও তা ক্ষতি করবে না, একটি মেয়ে সিংহকে তাড়ালেও তা ক্ষতি করবে না, এবং নেকড়ে বাঘ ছাগলের মাঝে রাখাল কুকুরের মতো থাকবে। পৃথিবী শান্তিতে পূর্ণ হবে, যেমন একটি পাত্রে পানি পূর্ণ থাকে। কেবল আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা হবে। যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে এবং কুরাইশরা নেতৃত্ব ফিরে পাবে। পৃথিবী রূপালী থালার মতো হয়ে যাবে, যেমন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)-এর যুগে ছিল। একটি আঙ্গুরের থোকা থেকে একটি দল খেয়ে তৃপ্ত হবে, একটি ডালিম থেকে একটি দল খেয়ে তৃপ্ত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ #৪০৭৭)

হজ্জ, উমরাহ এবং রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর কবর জিয়ারত

আকাশ থেকে অবতরণের পর হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) হজ্জ ও উমরাহ পালন করবেন। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “আমি সেই সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ! মারইয়ামপুত্র (হযরত ঈসা [আলাইহিস সালাম]) অবশ্যই রওহা নামক স্থানে তালবিয়া পাঠ করবেন, যখন তিনি হজ্জ বা উমরাহ করতে যাবেন, অথবা উভয়টি করবেন।” (সহীহ মুসলিম #১২৫২)

আরেক হাদীসে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ঈসা ইবনে মারইয়াম (আলাইহিস সালাম), আল্লাহর বান্দা ও রসুল, রওহা দিয়ে হজ্জ বা উমরাহ করতে না যান, অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জন্য উভয়টি একত্রিত না করেন।” (মাজমাউজ যাওয়ায়িদ #৯৯৪১)

মদিনা মুনাওয়ারায় আগমনের পর হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর পবিত্র কবর জিয়ারত করবেন। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “ঈসা ইবনে মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) অবশ্যই পৃথিবীতে অবতরণ করবেন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে। তিনি অবশ্যই একটি পাহাড়ি পথ দিয়ে হজ্জ বা উমরাহ করতে আসবেন, অথবা উভয়টির নিয়তে আসবেন। তিনি অবশ্যই আমার কবর জিয়ারত করবেন এবং আমাকে সালাম দিবেন, আর আমি তাঁর সালামের জবাব দিব।” (মুস্তাদরাক হাকিম #৪১৬২)

কিছু হাদীসে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) উম্মতকে উৎসাহ দিয়েছেন, যেন তারা হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাঁর কাছে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর সালাম পৌঁছে দেয়। (মাজমাউজ যাওয়ায়িদ #১২৫৬৯)

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর পাশে দাফন

আকাশ থেকে অবতরণের পর হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) উম্মতের মাঝে ৪৫ বছর অবস্থান করবেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করবেন, মুসলমানরা তাঁর জানাযার নামাজ পড়বে এবং তাঁকে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর কবরের পাশে দাফন করা হবে।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন, “ঈসা ইবনে মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি বিবাহ করবেন এবং তাঁর সন্তান হবে। তিনি ৪৫ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করবেন, এরপর ইন্তেকাল করবেন এবং আমার কবরের পাশে দাফন হবেন। অতঃপর (কিয়ামতের দিন) আমি তাঁর সঙ্গে একই স্থান থেকে উঠব, আবু বকর ও উমর (রাদ্বীয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর মাঝখান থেকে।” (মিশকাত #৫৫০৮)

আরেক হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাদ্বীয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “তাওরাতে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম)-এর বর্ণনা রয়েছে, এবং তাওরাতে এটাও লেখা আছে যে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) তাঁর সঙ্গে দাফন হবেন।” (সুনান তিরমিযি #৩৬১৭)

Check Also

কিয়ামতের আলামতসমুহ – একাদশ পর্ব

মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) এর রাজত্বকালে ন্যায়বিচার এবং বরকত মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) এর রাজত্ব হবে ন্যায়বিচার …