কিয়ামতের আলামতসমূহ – পর্ব ১৮

মহাযুদ্ধ ও ইস্তানবুল বিজয়

মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর আবির্ভাবের পর, আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে পৃথিবীতে শক্তি ও প্রভাব দান করবেন। খ্রিস্টানরা বুঝতে পারবে যে মুসলমানরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। তখন তারা মাহদী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করবে।

হাদীসে এসেছে, খ্রিস্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে। এই বাহিনীতে ৮০টি পতাকা থাকবে এবং প্রতিটি পতাকার নিচে ১২,০০০ সৈন্য, মোট ৯৬০,০০০ সৈন্য থাকবে।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এই মহাযুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং একে “মালহামাহ কুবরা” (মহাযুদ্ধ) নামে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন: “সব খ্রিস্টান একত্রিত হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তারা ৮০টি পতাকার নিচে এগিয়ে আসবে, প্রতিটি পতাকার নিচে ১২,০০০ সৈন্য থাকবে।” (ইবনু হিব্বান: #৬৭০৮)

এই যুদ্ধ আ’মাক ও দাবিক নামক স্থানে সংঘটিত হবে (যা সিরিয়ার হালবের নিকটে)। মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন। সব কাফির মুসলমানদের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে এবং ভয়াবহ যুদ্ধ হবে।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “কিয়ামত ততক্ষণ আসবে না যতক্ষণ না কাফিররা আ’মাক বা দাবিকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ঘাঁটি বানাবে। তখন শহর থেকে একটি বাহিনী বের হবে, যারা সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ মানুষ হবে (অর্থাৎ মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) এর বাহিনী)।”

যুদ্ধের সারি গঠিত হলে, রোমানরা (খ্রিস্টানরা) বলবে: “তোমাদের সেই মুসলমানদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করো যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে ও আমাদের লোকদের বন্দী করেছে।” মুসলমানরা বলবে: “না, আমরা আমাদের ভাইদের তোমাদের কাছে হস্তান্তর করবো না।”

এরপর যুদ্ধ শুরু হবে, যেখানে মুসলিম বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ পরাজিত হয়ে পালাবে—আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। এক-তৃতীয়াংশ শহীদ হবে—তারা আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অবশেষে, বাকি এক-তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে এবং তারা জীবনে আর কখনো পরাজিত হবে না।” (মুসলিম: ২৮৯৭)

এই বিজয়ের পর কাফিরদের আর পৃথিবীতে শাসনের আশা থাকবে না। এরপর মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) ইস্তানবুল বিজয়ের প্রস্তুতি নেবেন। তখন ইস্তানবুল কাফিরদের অধীনে থাকবে।

ইস্তানবুল বিজয়

মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) বানু ইসহাক গোত্রের ৭০,০০০ লোক নিয়ে ইস্তানবুলের দিকে যাত্রা করবেন। তারা জাহাজে করে ইস্তানবুল পৌঁছাবে। শহরের দেয়ালের কাছে পৌঁছে তারা উচ্চস্বরে তিনবার বলবে: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার!” এই তাকবীরের বরকতে শহরের দেয়াল ভেঙে পড়বে এবং মুসলমানরা শহরে প্রবেশ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে।

এই মহাযুদ্ধ ও ইস্তানবুল বিজয়ের মধ্যে সময় হবে প্রায় ছয় বছর। সপ্তম বছরে দাজ্জাল বের হবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন: “তোমরা কি এমন একটি শহরের কথা শুনেছো যার এক অংশ স্থলভাগে এবং অন্য অংশ সমুদ্রে?” সাহাবারা বললেন, “হ্যাঁ।”

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বললেন: “কিয়ামত ততক্ষণ আসবে না যতক্ষণ না বানু ইসহাক গোত্রের ৭০,০০০ লোক সেই শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তারা অস্ত্র ব্যবহার করবে না, তীর ছুঁড়বে না। বরং তারা তিনবার বলবে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার!’—প্রথমবারে সমুদ্রের অংশ ধসে পড়বে, দ্বিতীয়বারে আরেক অংশ ধসে পড়বে, তৃতীয়বারে প্রবেশের পথ খুলে যাবে। তারা শহরে প্রবেশ করে সম্পদ গ্রহণ করবে। তখন তারা শুনবে: ‘দাজ্জাল প্রকাশ পেয়েছে!’ তারা সবকিছু ছেড়ে ফিরে যাবে।” (মুসলিম: ২৯২০)

সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, “মুসলমানরা যখন কনস্টান্টিনোপল (ইস্তানবুল) বিজয়ের পর সম্পদ বিতরণে ব্যস্ত থাকবে এবং তাদের তরবারি জলপাই গাছে ঝুলিয়ে রাখবে, তখন শয়তান (অর্থাৎ একজন ফিতনা সৃষ্টিকারী) চিৎকার করে বলবে: “তোমাদের অনুপস্থিতিতে দাজ্জাল তোমাদের পরিবারে প্রবেশ করেছে!” তারা সবকিছু ছেড়ে শহর ত্যাগ করবে এবং কিছু অগ্রবর্তী ঘোড়সওয়ার পাঠাবে তথ্য যাচাই করতে। তারা দেখবে এটি গুজব ছিল। তবে শাম পৌঁছানোর কিছু সময় পর দাজ্জাল সত্যিই প্রকাশ পাবে।

রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেন: “আমি সেই ঘোড়সওয়ারদের নাম, তাদের পিতার নাম এবং তাদের ঘোড়ার রং জানি। তারা সেই দিনের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ার হবে।” (মুসলিম: ২৮৯৭, ২৮৯৯)

অন্য একটি হাদিসে হযরত মু’আয ইবন জাবাল (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেন: “প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাসের উন্নয়ন (কাফিরদের দ্বারা দখলের মাধ্যমে) হবে, এরপর ইয়াসরিব (মদীনা) হিদায়াতশূন্য হয়ে পড়বে। মদীনার এই অবস্থা হবে মহাযুদ্ধের পূর্বে। মহাযুদ্ধ হবে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পূর্বে। আর কনস্টান্টিনোপল বিজয় হবে দাজ্জালের আগমনের পূর্বে।” (আবু দাউদ: ৪২৯৬)

Check Also

কিয়ামতের আলামতসমূহ – চতুর্দশ পর্ব

নবী ঈসা (‘আলাইহিস সালাম)-এর বর্ণনা নবী ঈসা (‘আলাইহিস সালাম)-কে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলের কাছে প্রেরণ …