খোরাসান থেকে কালো পতাকার বাহিনী আসা
যখন মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর আবির্ভাবের সংবাদ ছড়িয়ে পড়বে, তখন খোরাসান থেকে একটি কালো পতাকা-ধারী বাহিনী মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-এর সঙ্গে যোগ দিতে মক্কা মুকাররমার দিকে রওনা হবে। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) উম্মাহকে এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “যখন তোমরা খোরাসান থেকে কালো পতাকা-ধারী বাহিনীকে মাহদীর দিকে যেতে দেখবে, তখন সেই বাহিনীতে যোগ দাও। নিশ্চয়ই সেই বাহিনীতে আল্লাহর খলীফা মাহদী থাকবেন।” (মুসনাদ আহমদ: ২২৩৮৭)
আরেক হাদীসে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “তোমরা মাহদীর বাহিনীতে যোগ দাও, যদিও তোমাদেরকে বরফে গড়াগড়ি করে যেতে হয়।” (সুনান ইবনু মাজাহ: ৪০৮৪, আল-ফিতান লি-নু’আইম: ৮৫৩)
কিছু বর্ণনায় অন্যান্য কালো পতাকা-ধারী বাহিনীর কথাও এসেছে, যারা মাহদীর বাহিনী নয়। তাই উম্মত যেন বিভ্রান্ত না হয়। মাহদীর বাহিনীর বৈশিষ্ট্য হলো—তারা হবে সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে অনুসরণকারী এবং সঠিক পথে পরিচালিত।
মাহদীর মক্কা থেকে মদীনায় গমন
খোরাসানের বাহিনী মাহদীর সঙ্গে মক্কায় যোগ দিলে, মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) তাদের নিয়ে মদীনায় যাবেন। মদীনায় পৌঁছে তিনি রওযা মুবারকে গিয়ে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম)কে সালাম নিবেদন করবেন। (কিয়ামত কবে আসবে, পৃষ্ঠা ৯০)
তিনি সুফিয়ানীর বাহিনীর দ্বারা বন্দী ও নির্যাতিত মদীনার মানুষ ও সাইয়্যিদদের মুক্ত করবেন। (ইশাআহ, পৃষ্ঠা ২০৬)
মাহদীর যুদ্ধ ও বিজয়
মদীনা থেকে বের হয়ে মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) মুসলিম বাহিনী নিয়ে বহু যুদ্ধ করবেন। এর মধ্যে একটি হবে সুফিয়ানীর বাহিনীর বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা মাহদীর বাহিনীকে বিজয় দান করবেন।
বিজয়ের পর মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সুন্নত অনুযায়ী বিতরণ করবেন এবং এখান থেকেই ইসলামের প্রসার শুরু হবে।
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “একজন কুরাইশী ব্যক্তি, যার মাতৃগোত্র হবে কালব গোত্র (সুফিয়ানি), মাহদীর বিরুদ্ধে বাহিনী পাঠাবে। মাহদী ও তার অনুসারীরা সেই বাহিনীকে পরাজিত করবে। যে ব্যক্তি কালব গোত্রের সম্পদ বিতরণের সময় উপস্থিত থাকবে না, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাহদী সম্পদ বিতরণ করবেন এবং নবীর সুন্নত অনুযায়ী মানুষের সঙ্গে আচরণ করবেন। এরপর ইসলাম শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত হবে।” (আবু দাউদ: ৪২৮৬)
মুসলমানদের খ্রিস্টানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি
মাহদীর আগমনের পূর্বে মুসলমানরা কিছু খ্রিস্টানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করবে। এরপর তারা খ্রিস্টানদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং বিজয় লাভ করবে। যুদ্ধ শেষে তারা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভাগ করে নেবে।
তখন এক খ্রিস্টান বলবে, “এই বিজয় ক্রুশের বরকতে হয়েছে।” মুসলমানরা রাগান্বিত হয়ে বলবে, “না! বরং আল্লাহর সাহায্যে বিজয় হয়েছে।” এক মুসলমান উঠে গিয়ে ক্রুশ ভেঙে ফেলবে। খ্রিস্টানরা তাকে হত্যা করবে, ফলে যুদ্ধ শুরু হবে এবং চুক্তি ভেঙে যাবে।
এই যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হবে এবং খ্রিস্টানরা বিজয়ী হবে।
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “তোমরা খ্রিস্টানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করবে এবং তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। বিজয় ও সম্পদ লাভ করবে। ফেরার পথে পাহাড়ি এলাকায় এক খ্রিস্টান বলবে, ‘ক্রুশ বিজয়ী হয়েছে!’ এক মুসলমান বলবে, ‘না! বরং আল্লাহ বিজয়ী হয়েছেন!’ মুসলমান ব্যাক্তি ক্রুশ ভেঙে ফেলবে, খ্রিস্টানরা তাকে হত্যা করবে। এরপর যুদ্ধ শুরু হবে এবং মুসলমানরা পরাজিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা সেই মুসলমানদের শাহাদাত দান করবেন।” (সহীহ ইবনু হিব্বান: ৬৭০৮)
এই যুদ্ধের পর আল্লাহ তা‘আলা মাহদী (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)-কে পাঠাবেন এবং মুসলমানদের ঘাঁটি হবে গূতা, যা দামেস্ক শহরের নিকটবর্তী।
হযরত আবু দারদা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত: রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) বলেছেন: “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের ঘাঁটি হবে গূতা, দামেস্ক শহরের নিকটে, যা শামের শ্রেষ্ঠ শহরগুলোর একটি।” (আবু দাউদ: ৪২৯৮)
Alislaam – বাংলা